https://www.somoyerdarpan.com/

3150

sylhet

চোরাচালানের নিরাপদ রোড ওসমানীনগর, অর্ধ কোটি টাকার চিনি জব্দ

৫ মামলায় বিএনপি নেতাসহ গ্রেফতার ১৩

প্রকাশিত : ৩০ অক্টোবর ২০২৪ ১২:২৯

ভারত থেকে অবৈধ পথে রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে আনা ভারতীয় চিনি চোরাচালানের নিরাপদ রোড হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে সিলেট-ঢাকা মহাসড়ক। দীর্ঘদিন থেকে এই ব্যস্ততম মহাসড়কটি ব্যবহার করা হলেও বিষয়টি অজ্ঞাত কারণে অজানা ছিল প্রশাসনের। স্থানীয়দের উদ্যোগে চোরাচালানের চিনি আটক হলে চোখ খুলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর। সম্প্রতি ওসমানীনগর পুলিশ তৎপর থাকায় একের পর এক চোরাই চিনির চালান আটক হচ্ছে। যার ফলে বিগত ১ মাসে প্রায় ৫৩ লাখ টাকার চোরাই চিনি উদ্ধার হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারতীয় সিমান্ত থেকে আসা চোরাই চিনি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠাতে ব্যবহার করা হচ্ছে ব্যস্ততম সিলেট-ঢাকা মহাসড়ককে। প্রতিদিন অবৈধ পথে আসা ভারতীয় চিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত হচ্ছে মহাসড়ক দিয়েই। সিলেট জেলার সাথে সরাসরি যোগাযোগের পথ সিলেট-ঢাকা মহাসড়কও এখন চোরাই চিনি চালানের পরিবহনের নিরাপদ রোড হিসাবে দীর্ঘদিন থেকেই ব্যবহার করা হচ্ছে। মধ্যরাত থেকে ভোররাত পর্যন্ত চলে পাচারকাজ। 

সূত্রে জানা গেছে, ভারতীয় চিনি চোরাচালানের ঘটনায় বিগত এক মাসে ওসমানীনগর থানায় দায়ের করা হয়েছে পৃথক ৫টি মামলা। এসব মামলায় ১৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। উদ্ধার করা হয়েছে ৯৫২ বস্তায় প্রায় ৪৬ হাজার ৫৫৬ কেজি ভারতীয় চিনি। যার বাজার মূল্য আনুমানিক প্রায় ৫৫ লাখ ৯৮ হাজার ৭২০ টাকা। চোরাই কাজে ব্যবহিত একাধিক যানবাহনও জব্দ করে পুলিশ। যার মধ্যে রয়েছে, ৩টি ট্রাক, ২টি মাইক্রবাস ও দুটি মোটরসাইকেল। এসব ঘটনায় জড়িত অনেকেই পালিয়ে গেলে তাদেরও গ্রেফতার অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানায় পুলিশ।

সর্বশেষ রবিবার ও সোমবার রাতে পৃথক স্থানে পুলিশ চেকপুস্ট বসিয়ে ৪৮০ বস্তায় ২৩ হাজার ৬০০ কেজি ভারতীয় অবৈধ চিনি উদ্ধার করে। জব্দ করা হয় দুটি ট্রাক। পৃথক দুই মামলায় ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার রাতে থানার সামনে পুলিশি চেকপুস্টে একটি ট্রাকে তল্লাশী করে ২৮০ বস্তা চিনি উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় চিনি বোঝাই ট্রাক জব্দসহ আটক করা হয় ৪জনকে।

আটককৃতরা হলেন, সলঙ্গা থানার বশিদেবপুর গ্রামের মগর আলীর পুত্র মোতালেব মন্ডল (৩০),  সিরাজগঞ্জ জেলার কামারকন্দ উপজেলার বড়দুল গ্রামের মৃত জেল হক মন্ডলের পুত্র বিপ্লব হাসান(২০), হবিগঞ্জ জেলার আজমিরিগঞ্জ উপজেলার বিরাট গ্রামের দুলাল মিয়ার পুত্র আমিনুল ইসলাম (২৮), সিলেট শহরের শেখঘাট এলাকার রেবতী মোহনের পুত্র স্বরজিত মোহন চন্দ্র ওরুপে রিপন (৪০)।

মঙ্গলবার বিকালে পুলিশ বাদি হয়ে থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাদের আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ওসমানীনগর থানার এস আই নূর হোসেন।

এর আগে গত রবিবার রাতে সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ফতেপুর থেকে ট্রাক যোগে সিলেট ঢাকা মহাসড়ক দিয়ে শেরপুরে যাচ্ছিল অবৈধ চিনি বোঝাই ট্রাক।

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খবর পেয়ে রবিবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ওনমানীনগর উপজেলার গয়নাঘাট নামক স্থানে চেকপুস্ট বসায় পুলিশ। ট্রাকটি ওই স্থানে পৌছিলে সেখানে তল্লাশী করে ৯ হাজার ৬০০ কেজি অবৈধ ভারতীয় চিনি উদ্ধার করা হয়। এসময় ট্রাক চালক সমিরন দাসকে (৩০) আটক করে পুলিশ।

সমিরন দাস জৈন্তাপুর উপজেলার পানিছড়া চা বাগান এলাকার নিরেশ দাসের পুত্র। চোরাচালান পণ্য পরিবহনের ট্রাকটিও জব্দ করে থানায় নিয়ে আসে পুলিশ। সোমবার বিকালে ওসমানীনগর থানায় দায়ের করা মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে ট্রাক চালক সমিরন দাসকে আদালতে প্রেরণ করা হয়।

অভিযোগ রয়েছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিয়ে রাতের অন্ধকারে মহাসড়ক দিয়ে চলে চিনি চোরারালান। ওসমানীনগর উপজেলার সিমান্ত পার করে দেয়াসহ ওসমানীনগরের বিভিন্ন হাট বাজারে চোরাই চিনির সিন্ডকেট তৈরীতে স্থানীয় কয়েকজন প্রভাবশালী জড়িত রয়েছেন। যাদের মাধ্যমে উপজেলার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বাজারের ব্যবসায়ীদের হাতে কম মূল্যে যাচ্ছে অবৈধ ভারতীয় চিনি। ব্যবসায়ীদের হাত পর্যন্ত এসব চিনি পৌছে দিতে তাদের মাধ্যমে কাজ করছে একদল চিনি সিন্ডিকেট।

স্থানীয়রা জানান, উপজেলার হাটবাজারগুলোতে দেশি প্রতি কেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা দরে। তবে, ভারতীয় চিনি ১২০টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ায় ক্রেতাদেরও চাহিদা রয়েছে। বস্তা পরিবর্তন করা প্রতি বস্তায় ৫ থেকে ৭০০ টাকা অধিক মুনাফা হওয়ায় কিছু ব্যবসায়ীরাও এই চিনি লুফে নিচ্ছেন।

এই বিষয়ে ওসমানীনগর উপজেলা বিএনপির সভাপতি দয়ামীর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান এসটিএম ফখর উদ্দিন বলেন, আপনারই দেখছেন কি পরিমান চোরাচালানের ভারতীয় চিনি উদ্ধার করছে পুলিশ। চোরাচালান রোধে পুলিশ তৎপর থাকায় গ্রেফতারও হচ্ছেন অপরাধীরা। বিএনপি নেতাকর্মীরাও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহায়তা করছেন। চিন্তার বিষয় যে, আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে কি পরিমান চোরাচালান হয়েছে। সেটি বর্তমান অবস্থানে পরিস্কার হচ্ছে।

ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্য মোনায়েম মিয়া বলেন, যোগদানের পর থেকেই আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা ও চোরাচালান রোধে আমি অব্যাহত ভাবে কাজ করছি। থানার পুলিশ সদস্যদের বিচক্ষুনতায় সফল অভিযান পরিচালনার পাশাপাশি চোরাচালানে জড়িতদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। এসব কাজে জরিতদের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে তাদেরও আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। এসব বিষয়ে পুলিশ তৎপর রয়েছে। কোর্টের আদেশ পেলে নিলাম প্রক্রিয়া অনুষ্ঠিত হবে।